কাকমাচি

যে নামে পরিচিতঃ

কাকমাচি,ছোট বেগুন,তিত বেগুন বা টমেটো,ফুটি বেগুন,মাকোই বা মাকো,আঙ্গুরে শেফা,বৈজ্ঞানিক নাম  Solanum nigram


গাছের পরিচয়ঃ


এটি জাতীয় গুল্ম এরা এক থেকে দেড় হাত উচু হয়, আবার তেমন সার মাটিতে গাছ হলে দুই হাত পর্যন্ত উচু হতে দেখা যায়। এটি ফল পাকান্ত ক্ষুপ অর্থাৎ ফল হয়ে পেকে গেলে গাছ মরে
 যায় ঠিক, তবে সেটা গ্রীষ্মকালে আবার জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যেই গাছ বেরোয়; কিন্তু সব সময়ই কিছু না কিছু গাছ পাওয়া যায়। এই গাছের পাতার অগ্রভাগ ক্রমশ সরু, পাতার কিনারা করাতের মতো কাটা থাকে। শরৎকাল থেকে আরম্ভ করে ফুল ও ফল হতে। এই গাছের ফুল ও ফল দুই গুচ্ছবদ্ধ হয়; এই ফল দেখতে অনেকটা মরিচের ফুলের মতো, আর ফলগুলি আকারে বৃহতী ফলের মতো; আর তার বীজ বেগুনের বীজের মতো হলেও আকারে অনেক ছোট হয়।
এদিকে সুশ্রুত টীকাকার ডল্বন বলেছেন, এই কাকমাচী দুই প্রকারের হয়, যে গাছগুলি একটু হরিদ্রাভ এবং পাতাগুলিও তেমন লম্বা হয় না,তাছাড়া এ প্রকারের গাছের ফল পাকলে হরিদ্রাভ লাল হয়, সেইগুলি আভ্যন্তর প্রয়োগের উপযোগী: আর যেসকল গাছ গাঢ় সবুজ রঙের হয়, পাতাগুলি একটু লম্বাটে এবং স্বাদেও খুব তিতো, এই গাছগুলিকে বাহ্য প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার উপদেশ দিয়েছেন। যে গাছের পাতা ছোটো, হাল্কা সবুজ, ফল পাকলে লাল-কমলা হয় সেটা স্বাদু প্রকৃতির আর যে গাছের পাতা বড় এবং ঘন সবুজ সেটা তিক্ত বা বিষাক্ত শ্রেণীর কালো বেগুনী ফল কখনো খাওয়া উচিত নয়। বাস্তবে, আমাদের দুই প্রকার রঙের ফলের গাছ নজরে
পড়ে। ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিবেচনা করে প্রয়োগ করতে হবে। ভারতের কলকাতার বাজারে ঝুড়ি ঝুড়ি কাঁচা সবুজ কাকমাচী ফল বিক্রি হাতে দেখা যায়, এগুলি মাদ্রদেশের জনগণ
লিভারকে ভাল রাখার জন্য শাকের মতো রান্না করে খেয়ে থাকেন। আর ইউনানি সম্প্রদায় এই সবুজ ফলগুলিকে শুকিয়ে
ঔষধ হিসাবে পাচন বা ক্বাথ করে অথবা তার অর্ক বা আরক
প্রস্তুত করে ব্যবহার করে থাকেন। বিস্তৃতি: এই গণের প্রায় ৭০০ প্রজাতি আছে। এটি জন্মে সমগ্র পৃথিবীর উষ্ণপ্রধান অথবা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। অবশ্য ৬ থেকে ৭ হাজার ফুট উচ্চতার মধ্যেও যে পাওয়া যায় না তা নয়। সুতরাং ভারতের সব প্রদেশেই পাওয়া যায় তবে কম বেশি। এটার
চাষও করতে হয় না, যত্ন ছাড়াই জন্মে ও মরে যায়। এই গাছটির ঔষধি নাম গড়কামাই, হিন্দিভাষী অঞ্চলে একে বলে মকোই, আবার ছাপরা অঞ্চলে এর প্রচলিত ভটকুয়া। কাকমাচি বা ফুটি বেগুন বা বায়সী একটি বেগুন বা টমেটো জাতীয় উদ্ভিদ। এই বেগুনগুলো খুব ছোট আকারের হয়।
এরা এক ধরনের গুল্ম যাদের অনেক ভেষজ গুণাগুণ আছে। নিম্নে সেসবের কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।

কাকমাছি একটি ঔষধি গুল্ম
 আভ্যন্তরিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে
 স্বাদুপত্র কাকমাচী ব্যবহার করতে হবে, এই গাছের পাতা
তিতো বা তিক্ত নয়; তবে মিষ্টিও নয়।
এ বিচারটা করে যদি চিনে
নেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে ব্যবহার না করাই ভাল। এটি এক
ধরণের গুল্ম। দুই ধরণের কাকমাছী আমাদের চোখে পড়ে
একটির ফল কালো আর অন্যটির সবুজ।
কাকমাচি দুরকম, স্বাদু ও তিক্ত। কবিরাজী চিকিৎসাশাস্ত্রে স্বাদুকে
 ব্যবহার করা হয় আভ্যন্তরীণ এবং তিক্তকে ব্যবহার করা হয় বাহ্য
প্রয়োগে। দক্ষিণ কোলকাতায় বাজারে কাকমাচি ফল বিক্রি হয়।
অনেকে শাকের মতো রান্না করে খান লিভার ভাল রাখার
জন্যে আর ইউনানী কবিরাজরা নিয়ে যান শুকিয়ে ওষুধ তৈরি করার
জন্যে। যে গাছের পাতা ছোটো, হাল্কা সবুজ, ফল পাকলে
লাল-কমলা হয় সেটা স্বাদু প্রকৃতির আর যে গাছের পাতা বড় এবং
ঘন সবুজ সেটা তিক্ত বা বিষাক্ত শ্রেণীর। কালো-বেগুনী
ফল কখনো খাওয়া উচিত নয়।


ব্যবহার্য অংশঃ ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয় সমগ্র ক্ষুপ বা গাছ ও
শুকনো ফল।


চাষ পদ্ধতিঃ উর্বর মাটিতে এই গাছ ভালো হয়। প্রায় সারা বছর গাছ
দেখতে পাওয়া যায়। মূলত আষাঢ় মাসে বীজ থেকে গাছ হয়।
শরৎকালে ফুল তারপরে ফল হয়।


1️⃣ যকৃত পাকস্থলী ও জিহ্বার প্রদাহে ১০ থেকে ১২ চা চামচগাছের রস জ্বাল দিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় খালিপেটে সেবন করতে হবে।
2️⃣ জণ্ডিস রোগে ১২ থেকে ১৪ চা চামচ অথবা আধা কাপ পাতার রস দিনে দুইবার সেবন করতে হবে।
3️⃣শোথ রোগে ১০ থেকে ১২ চা চামচ পাতা অথবা গোটা গাছের রস গরম করে সকাল বিকাল সেবন করতে হবে।
4️⃣ খোসপাঁচড়ায় কাকমাচির ফল ছোট মাছের সাথে ঝোল রেঁধে বা কচি পাতা চিকন করে কেটে মুড়ির সাথে খেলে খোসপাঁচড়া ভালো হয়। এছাড়া সরিষার তেলে ফল ভেজে ঐ তেল শরীরে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
5️⃣ গাউট রোগে পাতার পুলটিস রিউম্যাটিক আর্থারাইটিস বা গাউট আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করলে ব্যথা কমে যায়।
6️⃣ প্রমেহ রোগ: আয়ুর্বেদে দু’টি কথা আছে মেহ ও
প্রমেহ। এই দুটিই রোগের নাম। এই মেহ রোগটা বংশগতও
হয় না। আর রক্ত বা মাত্রাগতও হয় না; প্রমেহ রোগ তা হয়। এই
কাকমাচীর পাতা প্রমেহের ক্ষেত্রেই কাজ করে। এটা রসবহ
স্রোত দূষিত হয়ে যে প্রমেহ রোগ হয়, তাকেই আমরা বলি
মূত্রাতিসার অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণ প্রস্রাব হবে এবং আস্তে
আস্তে শরীর দূর্বল হতে থাকবে, আর থাকে পিপাসা,
আলস্য, নিদ্রা এবং পায়ের মাংসপেশীগুলিতে ব্যথা হবে।
এক্ষেত্রে স্বাদু, কাকমাচী পাতার রস একটু গরম করে,
ছেঁকে নিয়ে সেই জলটি সকালের দিকে ১ চা চামচ ও
বিকালের দিকে ১ চা চামচ, খেলে মূত্রাতিসারে উপকার হবে।
আর অগ্নিবল যদি ভালো থাকে, তাহলে ২ চা চামচ করে
খেলেই হবে
7️⃣ পান্ডু রোগ: যাকে ভুলবশত জন্ডিস বলা হয়, এটা সে রোগ
 নয়; এটা আসলে রক্তাল্পতা, বর্তমানের এনিমিয়া রোগ। যাঁরা এই রোগাগ্রস্ত, তাঁদের শরীরটা হবে ফ্যাকাসে,
দাস্ত হবে ছাড়া ছাড়া বা ভসকা, মলে থাকবে টক গন্ধ; এদের
ক্ষেত্রে স্বাদু কাকমাচী, এই গাছের ফল পাকলে মিষ্টি লাগে
আর রং হয় লাল, এগুলি কাকে খায়; সে পাতার রস গরম করে,
ছেঁকে, সকালে ও বিকালে এক চা চামচ করে খেতে হবে।
এটাতে এনিমিয়াটা চলে যাবে, তবে এর সঙ্গেলোহঘটিত
ঔষধ খাওয়া ভালো।
8️⃣ কুচো ক্রিমি: যাকে আমরা চলতি কথায় কুচো ক্রিমি বলে থাকি, এই ক্ষেত্রে স্বাদু, কাকমাচী পাতার রস ১৫
ফোঁটা তা যদি বালক হয় ও ৭ থেকে ৮ চা চামচ দুধ মিশিয়ে
খেতে হবে। তবে রসটা গরম করে ছেঁকে নিতে হবে।
9️⃣ মূত্রকৃচ্ছ্র: বায়ু বিকারে মূত্রবহ স্রোতের গ্রন্থি যখন শিথিল
হয়ে যায়, তখন প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা আর থাকে না, আর
যদি গ্রন্থি স্ফীত হয় তাহলে বারে বারে প্রস্রাব হয় বটে,
কিন্তু কষ্টের সঙ্গে এবং পরিমাণেও অল্প হতে থাকে। এইটাই
মূত্রকৃচ্ছ্র রোগ। অবশ্য অস্মরী হলে কোনো
কোনো সময় তার সঙ্গে ব্যথাও অনুভূত হতে থাকে।
এক্ষেত্রে স্বাদু কাকমাচী পাতার রস গরম করে, ছেঁকে
নিয়ে এক বা দুই চা চামচ খেতে হবে।
1️⃣0️⃣ অরুচি: স্বাদু কাকমাচীর পাতা অল্প সিদ্ধ করে, জল ফেলে
দিয়ে সেই শাক ঘি দিয়ে সাঁতলে শাকের মতো প্রথমে
ভাতের সঙ্গে খেলে অরুচি সেরে যাবে।
1️⃣1️⃣ এলার্জি বা আভ্যন্তরীণ শোথ: এই রোগ সাধারণত পিত্ত
শ্লেষ্মা প্রধান লোকদের হয়ে থাকে। এদের পক্ষে
উষ্ণগুণান্বিত দ্রব্যই শোথের কারণ হয়। সেক্ষেত্রে স্বাদু
কাকমাচীর রস ১ চা চামচ গরম করে, ছেঁকে দু’বেলাই
খেতে হবে। আর যদি গায়ে চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে,
তাহলে ঐ গাছ বাটা অল্প গরম করে গায়ে লাগালেও ওটা কমে
যাবে।
1️⃣2️⃣ বিষিয়ে যাওয়ায়: কোনো জায়গায় বিষাক্ত পোকার কামড়ে বা
লোমফোড়া হয়ে কিংবা নখ লেগে বিষিয়ে গিয়ে যদি ফুলে
লাল হয়ে ওঠে ও যন্ত্রণা হয়; সেক্ষেত্রে কাকমাচীর গাছ
পাতা বেটে, সামান্য গরম করে ঠান্ডা হওয়ার পর অল্প ঘি মিশিয়ে
আহত জায়গায় লাগালে ওটার বিষটা কেটে যাবে। প্রসঙ্গত
বলে রাখা ভালো এখানে স্বাদুপত্র কাকমাচী ব্যবহার না
করলেও চলবে
1️⃣3️⃣ ঘামাচি: কুনো ব্যাঙের গায়ের মতো শরীরে চাপড়া ঘামাচি
হয়েছে সেক্ষেত্রে এই কাকমাচী পাতা বাটা হলুদের
মতো গায়ে মাখলে ওটা সেরে যায়
1️⃣4️⃣ চুলকানিতে: এটা শরৎকালে ও শীতের শুরুতে বেসাতি,
এটির বৈশিষ্ট্য হলো প্রথমেই হাতে ধরবে, তারপর
যোগ্যস্থানে আক্রমণ করবে। এদের পক্ষে কাকমাচী বাটা
একটু গরম করে গায়ে মাখলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই
এই রোগটা চলে যাবে। তাছাড়া সম্ভব হলে স্বাদু কাকমাচীর
পাতা জলে অল্প সিদ্ধ করে, জলটা ফেলে দিয়ে, শাকের
মতো রান্না করে অল্প পরিমাণে খেতে পারলে আরও
ভালো হয়।
1️⃣5️⃣ কুষ্ঠ রোগ: এই রোগে স্ফোটক যখন বেরোয়
সেক্ষেত্রটা সর্বদাই থাকবে, কোনো অঙ্গের অগ্রভাগ,
যেমন হাতের, পায়ের, নাকের, কানের ও চোখের জায়গাটিতে। এ রোগে আরও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই স্ফোটক বা
ফোড়া ওঠার সময় তার রংটা থাকবে কালো, ব্যথাও তেমন হবে
না ও পুঁজও হবে না, অথচ ক্ষত বেড়ে যেতে থাকবে। এই
রকম ক্ষেত্রে যে কাকমাচীটা তিতো বা তিক্ত সেইটার রস একটু গরম করে, ছেঁকে, এক চা চামচ করে সকালে ও
বিকালে ২ বার খেতে হবে। আর ঐ পাতা বেটে
ব্যাধিতস্থানে প্রলেপ দিতে হবে।
1️⃣6️⃣ ঝাপসা দেখায়: তিতো কাকমাচীর পাতা গরম জলে ধুয়ে,
থেঁতো করে তার রস এক বা দুই ফোঁটা একবার করে
চোখে দিতে হবে। এই রকম একদিন অন্তর ৫ থেকে ৬ দিন
ব্যবহার করার পর ঐ ঝাপসা দেখা চলে যাবে, তবে প্রাচীন
বৈদ্যদের অভিমত হলো রসটা গরম করে ছেঁকে, ঠান্ডা হলে
 সেই রস চোখে ফোঁটা দেওয়াই ভালো।
1️⃣7️⃣ চোখে পিচুটি পড়ায়: অনেকের চোখে দেখা যায় যে
সমস্ত দিনই চোখের কোণে জমা কফের মতো অথবা
জমা কফের সুতোর মতো পিচুটি পড়ছে। এটা এক ধরনের
নেত্রনালী রোগ। এই রোগের ওষধ হলো কাকমাচীর
ফল অল্প শুকিয়ে নিয়ে, একটি পাত্রে আগুন রেখে তার
মধ্যে ঐ ফল দিয়ে, তার ধোঁয়া চোখে লাগাতে হবে;
তবে সরাসরি ধোঁয়া যেন চোখে না লাগে, তাই কাপড় দিয়ে
মুখ ঢেকে ঐ ধোঁয়া চোখে লাগাতে হবে।











Next Post Previous Post