চাকুন্দে

যে নামে পরিচিতঃ

বাংলা চাকুন্দে,চক্রমর্দ,বন চাকুন্দা,চাকুন্ডা,হিন্দি চক বড়,তেলেগুতে চানুপাদা ভিউলু,তামিল ভাষায়
কাউল,মাদ্রাজীতে কানকুটি,গুজরাটীতে চিমার চিনােল,ইংরেজীতে বলে চাকসিন,বৈজ্ঞানিক নাম Senna Tora,


গাছের পরিচয়ঃ

অনেকের কাছে পরিচিত একটি গাছ চাকুন্দে আগাছা হিসাবে পরিচিত হলেও এই
গাছের ফুল, পাতা, ফল দিয়ে বাচ্চারা খেলে থাকে।  এর নানা ঔষধি গুণ আছে। চাকুন্দা গুল্ম
জাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদ এর পাতার আকৃতি প্রায় গোল এবং ব্যাস প্রায় এক ইঞ্চি মতো হয়ে থাকে। পাতা দেখতে কোমল
হয়। এর গায়ে নরম লোম হয়, এর পত্রকাণ্ডের দুই দিকে
বিপরীতভাবে পাতা হয়। ৬টি পাতা থাকে একটি ডালে। ফুলগুলির
বোটাও জোড়া জোড়া হয়, পাতার গোড়া থেকেই ফুল বের হয়, ফুলের রং হলুদ বর্ণের। শুঁটি ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা হয়
এবং ভিতরের বীজগুলি চ্যাপটা হয়। বর্ষায় এর ফুল ফোটে ও
শীতে ফল হয়; এটি একটি ওষধি গাছ। এর ফল পাকলেই গাছ
মরে যায়। এই গাছের আরও বৈশিষ্ট্য হলো সন্ধ্যা নামলেই এর
নিদ্রা আসে অর্থাৎ দিনের শেষে পাতাগুলি পরস্পর জুড়ে যায়। সমতল ও গরম আবহাওয়ায় এটা একেবারেই বাঁচে না

বাজারে চাকন্দের যে বীজ পাওয়া যায় তা উজ্জল কালাে রংয়ের ।দেখতে চ্যাপটা ধরণের , অনেকটা ডিম্বাকৃতির ।আগার দিকটা কিছুটা ছুচালো থাকে ।বীজ স্বাদে খুবই তিক্ত লাগে

ভারতের প্রদেশ ভেদে এর নামেরও ভিন্ন হয়। এই গাছের মত আরেকটি গাছ আছে, তাকে দাদমারির গাছ বলে। গাছগুলির পাতা
বড় আকৃতির হয়, গাছও ৪ থেকে ৫ ফুট উচু হয় সেই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Cassia alata Linn

জন্মস্থানঃ

চাকুন্দে সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার উদ্ভিদ। বাংলাদেশ, ভারত,
নেপালসহ অন্য দেশসমূহে এই গাছ পাওয়া যায়।

চাষ পদ্ধতিঃ

এই গুল্ম অযত্নে জন্মে। পরিত্যক্ত স্থানে
জন্মে থাকে। বীজ থেকে চারা জন্মে।

ব্যবহার্য অংশঃ

ঔষধ হিসাবে এর বীজ, মূল ব্যবহার হয়।

চাকুন্দার ঔষধি গুণাগুণঃ


1️⃣ বিষাক্ত পোকার কামড়: অনেক সময় আমাদের ঘুমন্ত
অবস্থায় কিংবা চলার পথে কোনো পোকায় কামড়ে দিয়ে
থাকে, কিন্তু কোনো কিছু দেখাও গেল না। দুই এক দিন
বাদে দেখা যাচ্ছে সেখানটায় ফুলেছে এবং তার আশপাশের
গাঠগুলিতে ব্যথা হচ্ছে, তখনই বুঝতে হবে যে, কোনো
বিষাক্ত কীট দংশনের ফলেই এটি বিসর্পিত হয়েছে।
এক্ষেত্রে এই চাকুন্দে বীজের গুঁড়ো আধ গ্রাম
থেকে এক গ্রাম পর্যন্ত মাত্রায় বা ৪ রতি থেকে ৮ রতি
পর্যন্ত সকালে ও বিকালে দুবার জলসহ খেতে হবে। এটাতে
দুই একদিনের মধ্যে বিষটা কেটে যাবে। কোনো দাগ যদি
নজরে পড়ে, তা হলে ওখানে ঐ বীজ বেঁটে লাগিয়ে
দিতে হবে।
2️⃣ স্নায়ুগত বাত: যাকে আমরা চলতি কথায় ঝিনঝিনে বাত বলি। এ
রোগের সাধারণ লক্ষণ হলো চোখের পাতা নাচে, পা
নাচানো অভ্যোস, মাঝে মাঝে কানে ঝি ঝি পোকা ডাকার
শব্দ শোনা যায়, একটু বসে থাকলেই পায়ে ঝিঝি ধরে,অনেক সময় হাতের বা পায়ের পেশীগুলি নাচতে থাকে; এও
দেখা গেছে পেটের উপরটায় মাঝে মাঝে কেঁপে
ওঠে, একটা হাত দিয়ে চেপে দিলেই ঐ কাঁপাটা থেমে যায়;
একে হালকা করে ভাবলে চলবে না। এটাকে উপেক্ষা
করলে পরিণামে চোখের অসুখ হবেই। তাই এটাকে নিরাময়
করার উপদেশ আয়ুর্বেদের মনীষীগণ দিয়েছেন।
এক্ষেত্রে ঔষধ হলো চাকুন্দের বীজের গুঁড়ো এক
গ্রাম, আধা কাপ গরম জলে ফেলে, আধা ঘণ্টা বাদ তাকে
ছেঁকে নিয়ে, থিতিয়ে গেলে সকালে একবার করে
খেতে হবে; এটা একদিন অন্তর খাবেন, তবে অন্তত
মাস খানেক খেতে হয়, তারপর সপ্তাহ ১ দিন করেও কিছুদিন
খেতে হবে।
3️⃣ রক্তগুল্ম: অরুচি থেকে আরম্ভ করে গর্ভের লক্ষণ
সবই হবে এবং গর্ভের স্পন্দন দুটাতেই হবে, তবে
গর্ভসঞ্চারে শূলের মতো কোনো ব্যথা হবে না।
রক্তগুল্মে এই ব্যথাটা থাকবে। তবে বর্তমানে অনেক সহজ
পদ্ধতিতে এটা গর্ভ কিনা তা নির্ণয় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে
চাকুন্দের বীজ এক গ্রাম ও মূলের ছাল ২ গ্রাম দুই কাপ জলে
ফুটিয়ে নিয়ে আধা কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, প্রতিদিন
সকালে ও বিকালে দুবার খেতে হবে; এর দ্বারা স্রাবও হয়ে
যাবে, আর গুল্মের যন্ত্রণাও চলে যাবে।
4️⃣ ক্রিমিতে: অনেক সময় মুখ দিয়ে জল ওঠে, বমি বমি ভাব
করে, যাকে আয়ুর্বেদে বলে বিবমিষা। এটা যে ক্রিমির
জন্যই সেটা মনে করা উচিত নয়, কারণ অম্লপিত্তেও তো
এমন হয়। আবার মলদ্বার চুলকোলেই যে ক্রিমি, এটা ভাবাও ঠিক
নয়, কারণ অর্শ থাকলেও তো মলদ্বার চুলকায় এই রকম
ক্ষেত্রে সকালে ও রাত্রে শুতে যাবার সময় ১ চামচ পরিমাণ চাকুন্দে বিচির গুঁড়াে খেলে ক্রিমির উৎপাত কমবেই তবে তিন দিন এ নিয়মে ঔষুধ ব্যবহার করা দরকার ।
5️⃣ প্রবল হাঁপানিতে: যাঁদের একজিমার সঙ্গে হাঁপানি অথবা
অর্শের রক্ত বন্ধ হওয়ায় হাঁপানি প্রবলাকার ধারণ করেছে কিংবা
অন্য কোনো কারণে রক্তদৃষ্টি হয়ে এক সঙ্গে যুক্ত
হয়েছে। এক্ষেত্রে চাকুন্দে বীজ ১ গ্রাম একটু
থেঁতো করে, এক কাপ জলে সিদ্ধ করে আধা কাপ থাকতে
নামিয়ে ছেঁকে খেতে হবে প্রয়োজন বোধে
সকালে ও বিকালে ২ বার দুই একদিন খাওয়ার পর কয়েকদিন
একবার করে খেতে হয়।
6️⃣ ছুলিতে: এ রোগ দীর্ঘদিন শরীরে বসে থাকলে কারও
কারও এ থেকে শ্বেতি পর্যন্ত হতে দেখা যায়। মনে রাখা
উচিত যে, এই রোগ যাঁদের হয়, তাঁদের সাবান বা ক্ষারজাতীয়
কোনো জিনিস গায়ে মাখা উচিত নয়। এই ছুলির ক্ষেত্রে
চাকুন্দের কাঁচা ফল গোমূত্র দিয়ে বেঁটে লাগাতে হয়,
তারপর এক ঘণ্টা বাদে ধুয়ে ফেলতে হয়; কাঁচা না পেলে ৪
থেকে ৫ গ্রাম বীজ নিয়ে, সেই বীজ গোমূত্রে
বেটে লাগালেও হবে। এটি ব্যবহারে কয়েক দিনের
মধ্যেই এগুলি সেরে যাবে।
7️⃣ দাদ: যাকে সাধুভাষায় দদ্রু বলে। এই দদ্রু শব্দটির বিন্যাস করা
হয়েছে, দদ + রুক, এর অর্থ হচ্ছে ছোট ছোট দানা
যেগুলি হবে, সেগুলো একটু চেরা দাগ আরও লম্বা হয়, আর
ঐ জায়গাটা একটু পুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে চাকুন্দের বীজ
জলে বেঁটে, একটু গরম করে ঘষে ঘষে লাগাতে হয়।
প্রতিদিন একবার করে ২ থেকে ৩ দিন লাগালে
উল্লেখযোগ্য উপকার হবে; তারপর মাঝে মাঝে লাগালে
ওটা সেরে যাবে।
দাদে এই চাকুন্দে বীজ ব্যবহারের সহজ পদ্ধতি হলো এই
চাকুন্দের বীজকে লেবুর রসে বেটে ওখানে লাগাতে
হবে, তবে একটু জ্বালা করবে। এখানে একটু সাবধানতা
অবলম্বন করতে হবে বিশেষ কোমল অঙ্গে লেবুর
রসে বাটা চাকুন্দে না লাগানোই ভালো।
8️⃣ আধকপালে মাথা ব্যথায়: একে আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে
‘অধবিভেদক’ রোগ, এ রোগে চাকুন্দের বীজ ভাতের
আমানিতে বেঁটে কপালে লাগাতে হবে। আমনি হলো ভাত দুই
থেকে তিন দিন ভিজিয়ে রাখলে যে টক জলটা তৈরি হয় সেইটাই
এই রোগকে হালকা ভাবা উচিত নয়,পরিণামে এ থেকে কঠিন
চোখের অসুখ আসতে পারে। এমন কি শঙ্খক রোগও
হতে পারে।
9️⃣ অর্শ রোগ হলে চাকুন্দের বীজ আন্দাজ এক গ্রাম চন্দনের
মতো করে বেঁটে অল্প মাখন মিশিয়ে অর্শের বলি বা তার
চারপাশে লাগাতে হবে। এর দ্বারা যন্ত্রণার উপশম হবে।
1️⃣0️⃣ কাশি ও হঠাৎ ঠান্ডা লেগে অথবা পুরাতন কাশিতে বড়দের ২ চামচ এবং ছােটদের এক চামচ পাতার রস দিনে দু'বার খেতে হবে
1️⃣1️⃣ চোখ ওঠালে চাকুন্দে বিচির গুড়া চোখের পাতার নীচে প্রলেপ দিতে হবে এটি ভারতের সিন্ধুপ্রদেশের একটি জনপ্রিয় ভেষজ প্রথমে বিচির ভেতরের শাঁস পানিতে গুলে সে দ্রবণ চোখে লাগালে রােগের উপশম হয় । আয়ুর্বেদীয় লােকো ব্যবহার ও হেকিমিতে এ বনৌষধির বিচি চোখ ওঠা রােগে ব্যবহৃত হচ্ছে ।
1️⃣2️⃣ অজীর্ণ  বায়ুবৃদ্ধি ও পিত্তাধিক্য ও শুকনাে আদাগুঁড়াে , সৈন্ধবলবণ এবং আমলকী গুঁড়াে , প্রতিটি ১ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে তাতে দু'চামচ চাকুন্দের নির্যাস মিশিয়ে সকালে একবার মাত্র খেলে অবশ্যই উপকার পাবেন নিয়মিত মাত্র ২ সপ্তাহ ব্যবহারে স্থায়ী সুফল পাওয়া যাবেই
1️⃣3️⃣ স্বাভাবিক এবং প্রসূতির কোষ্ঠবদ্ধতা : কোষ্ঠবদ্ধতা মারাত্মক ব্যাধি হলেও প্রসূতির জন্য খুবই ক্ষতিকর কারণ জোলাপ প্রয়ােগ করতে প্রসূতির পক্ষে বারবার পায়খানায় যাওয়া সম্ভব হয় না অপরদিকে বেগ দিয়ে পেটের মলকে বের করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এ ক্ষেত্রে এক চামচ যষ্ঠিমধু
গুড়াে , গােলাপ ফুলের পাপড়ি ২ গ্রাম এবং তিন চামচ চাকুন্দের নির্যাস একসঙ্গে মেখে খেলে স্বাভাবিক ভাবে পেটের মল পরিষ্কার হয়ে যাবে ।
1️⃣4️⃣ একজিমা রােগটি কোন ঔষুধে ভাল হতে চায় না বর্তমান অ্যালােপ্যাথি চিকিৎসায় একজিমা ভাল করলেও এতে অন্য কোন কঠিন রােগের আক্রমণ ঘটে একমাত্র চাকুন্দে বিচির নির্যাস রক্ত পরিষ্কার করে একজিমা ভাল করে দেয় ।
1️⃣5️⃣ ক্ষত এবং চর্মরােগ ‍: বিভিন্ন ধরনের চর্মরােগ এবং যে কোন ধরনের ক্ষত বিশেষ করে লিঙ্গ ক্ষতে চাকুন্দে বিচির গুঁড়াে প্রলেপ দিলে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে নিরাময় হয় দিনে একবার প্রয়ােগ করা দরকার ।
1️⃣6️⃣ আমাশয় মলের সঙ্গে সাদা আম এবং বারবার মলের বেগ থাকলে ১ চামচ করে ঠান্ডা পানির সাথে খােসাসমেত চাকুন্দে বিচির গুঁড়াে দিনে দু'বার খেলে ভাল হয়ে যাবে ।


জরুরী তথ্যঃ

চাকুন্দে বীজের খােসা থেকে চাকসিন এবং আইসাে চাকসিন নামে দুটি উপক্ষার আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে চাকসিন সালফেট দেহের হৃদযন্ত্র এবং স্নায়ুচক্রের অবসাদ আনে ।

 চাকুন্দের বীজের নির্যাস তৈরি করতে হলে খােসা সমেত ১০০ গ্রাম বীজকে ২৫০ মিলিলিটার পানিতে সেদ্ধ করে ১০০ মিলিলিটার হলে আগুন থেকে নামিয়ে নিতে হবে  ঠান্ডা হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ছেকে বােতলে রেখে দেয়া দরকার ।

 চাকুন্দের বীজ কিছুটা সুগন্ধযুক্ত চাকুন্দে বীজের ওপরের খােসা উত্তেজক এবং মূত্র বৃদ্ধিকারক ।







Next Post Previous Post